নদীর একুল ভাঙ্গে ওই কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা রে ভাই এইতো নদীর খেলা। নদী ভাঙ্গনের প্রকৃতির এ নিয়মের কথা সবাই বেশি বা কম জানেন। আর এ নিয়েই আছে প্রভাদ, আছে গান, আছে কবিতা। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মটি শুধু নদী ভাঙ্গনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় এ নিয়মটি জাতি, গোষ্ঠী বা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উত্থান পতনের ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্য করি। পৃথিবী জুড়ে প্রবাদ ছিল, ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হয় না। ব্রিটিশরা যখন দুনিয়া জুড়ে দৌর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে ঘোড়া দৌড়াচ্ছিল তখন এমন কথা সবাই বলতো ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হয় না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এমন কথা আজকাল আর কেউ বলে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা মহা কিতাব আল কুরআনে সূরা ইমরানের ২৬ নং আয়াতে বলেন,বল হে আল্লাহ, বিশ্ব জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্র ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান কর এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত ও অপমানিত করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর উপর শক্তিশালী।
অর্থাৎ প্রকৃতির দোহাই দেই আর যাই করি মূলত: সব ই আল্লাহর সুন্নত। আল্লাহ কাউকে অনেক দিয়ে পরীক্ষা করেন, কারো নিকট থেকে কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে না দিয়েও পরীক্ষা করেন। যেমন তিনি যাকে ইচ্ছা ছেলে দান করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়ে দান করেন, যাকে ইচ্ছা ছেলে ও মেয়ে দুটোই দেন, আবার যাকে ইচ্ছা ছেলে মেয়ে কোনটাই দেন না। সবই তার পরীক্ষা । কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেন, কাউকে বাস্তহারা করেও পরীক্ষা করেন।
বর্তমান পৃথিবীর সর্বজনবিদিত বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হওয়া থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বসালিশদার বনতে থাকে। বনতে বনতে বিশ্ব শালিশ দার, বিশ্বনেতা, বিশ্ব মোড়ল পশ্চিমা প্রভু ইত্যাদি বহু উপাধিতে ভূষিত হতে থাকে। অন্যদের নেতৃত্বের বিদায়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে আল্লাহ তায়ালা এমন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম করে দেয় বিগত বহুদিন, বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়লীপনার ছড়ি ঘুরাতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কথায় অধিকাংশ দেশ উঠ-বস করা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেয়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা সবাই মুখস্ত করে, তাদের সংজ্ঞাতেই সবাই উদাহরণ দেয়, বুলি আওড়ায়। মানবতার বাণী ও মানবতার প্রবক্তা হিসেবে তারাই বিশ্বব্যাপী পরিচিতির আসনে বসে। ইউনাইটেড স্টেট মানি লন্ডারিং এর আইন তৈরি করে বিশ্বব্যাপি সে আইনের প্রচার প্রসার, তালিম, তরবীয়ত চলতে চলতে থাকে। দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংকে ও শাখায় শাখায় মানিলন্ডারিং এর কমিটি ও ডেক্স আলাদা করে । আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের আইন তৈরি করে। আর আমেরিকার মুখে মুখ মিলিয়ে সুরে সুর মিলিয়ে টেরোরিজমের বিশ্বব্যাপি সংজ্ঞায়ন, শ্রেণীকরণ, চিত্রায়ন, চিহ্নিতকরণ চলতে থাকে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বহু ডিভিশন বহু শাখা প্রশাখা টেরোরিজমের উপরে বহু প্রশিক্ষণ, অভিযান, দমন ও নির্মূলিকরণ চলতে থাকে। এভাবে আমেরিকায় যা উচ্চারণ করে, প্রবর্তন করে বা চালু করে বিশ্বব্যাপী অধিকাংশই বুঝে না বুঝে যেভাবেই হোক তল্পি বাহকের ভূমিকায় নেমে পড়ে। বহু দেশ আমেরিকা কে রীতিমতো এমন প্রভুর মতো মনে করে যে , তাদের বাণী বা বক্তব্যকে ঈশ্বরের বাণীর মতো অন্ধভাবে মেনে নিতে থাকে।
কিন্তু বিশ্ব প্রভু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা তার সুন্নত মোতাবেক ক্ষমতার মসনদের পায়াগুলো ক্ষয় করতে শুরু করেছেন। অনেক উঁচু মসনদের খুঁটি গুলো দিন দিন মনে হয় ক্ষয় হয়ে খাটো হতে বসেছে। নিচে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের সামান্য উদাহরণ তুলে ধরছি।ভিয়েতনামের যুদ্ধে নেমে বিলিয়ান বিলিয়ন ডলার অপচয় করেও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরে আসতে হয়। তাতে মর্যাদা অতটা ভুলণ্ঠিত হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তানের অনাহার অর্দাহারে, জীর্ণ-শীর্ণ, অভাবগ্রস্ত দারিদ্র পীড়িত লুঙ্গি পরা পাঞ্জাবি পরা মোল্লাদের সাথে প্রায় ২০ টি বছর লড়াই করে শুধু পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরেনি বরং বিশ্ব নেতৃত্বের আসনকে অনেক ক্ষয় করে ফেলেছে, অনেক নিচে নেমে ফেলেছে।
এর ফাঁক দিয়ে আবার বিশ্বখ্যাত একটা কাগুজে বাঘ ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে মানবতাবিধ্বশী অস্ত্র তৈরি ও মজুদ করার তথ্য আছে বলে সেখানে যে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হলো, তাতে মান আর ইজ্জত কোনটাই বাকি থাকলো কি? যে মারণাস্ত্রের তথ্য আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দেয়া হয়েছে, সেই গোয়েন্দা তথ্য সর্বৈব মিথ্যা প্রমাণিত হলো সারা দুনিয়াব্যাপী। কাগুজে বাঘ সাদ্দামকে মারা সম্ভব হলেও এতে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে গর্ব ও অহমিকা কিন্তু কলঙ্কিত হয়েছে। কেননা লড়াই যদি অন্তত: বাঘে মহিষের না হয়ে সিংহ আর বিড়ালে হয়, তাহলে সেটাকে লড়াই বলা নিতান্তই অপমানজনক।
ইতোমধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেভাবে পশ্চিমা অনুগত শাসকদের কে হটিয়ে সেনাবাহিনী ও আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করেছে এবং পুরো আফ্রিকা জুড়ে একটা একটা দেশ করে পশ্চিমাদের হাতছাড়া হতে চলেছে তাতে বিশ্ব নেতৃত্বে থাকা আমেরিকার জন্য পড়ন্ত বেলার ইঙ্গিত বলে মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন জাতিগত প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অমানবিক ও পৈচাসিক নির্যাতন করে অসংখ্য মুসলিম নারী ও শিশুকে হত্যা করে, পুড়িয়ে ফেলে, মেরে নদীতে ফেলে দেয় তখন বিশ্ব শালীসদার হিসেবে মানবতার জয় গান গাওয়া আমেরিকার ভূমিকা যথার্থ ছিল কি? আর যারা মানবতাকে এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিল তাদের দেশের নেত্রী অংসাঙ সুকিকে বিশ্ব মওড়লরআ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ঘোষণা করল ভালো কথা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সাং সুকি এই মিয়ানমারের এমন ঘৃণিত নিন্দিত সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে জাতিসংঘে মানবতা ও শান্তির বিপক্ষে অবস্থান নিল ! ছি! ছি!
আর পৃথিবীবাসী কি দেখলো? দেখল, আল্লাহর সুন্নত! সেটা কি? সেটা তো সবাই আজ প্রত্যক্ষ করছে মানবতাবিধ্বংশী মিয়ানমারের সেই সেনাবাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অংসাং সুখী কে ক্ষমতাচ্যুত করে জেলখানায় পুরিয়ে শান্তিতে নোবেলের মর্যাদা বুটের তলায় পৃষ্ঠ করছে! গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাসিত সরকারকে ও নোবেল বিজয়ী সুকীকে আমেরিকা কি প্রটেকশন দিল? এই পৈচাশিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃত্ব যখন যথার্থ ভূমিকা নেয়নি তখন আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে একশন নেয়া শুরু করেছেন, তাই নয় কি? আমরা দেখি মিশরে নিরঙ্কুশ ও নির্ভেজাল নির্বাচনের মাধ্যমে ৮৬ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে ডঃ মুর্সিকে মিশরের জনগণ নির্বাচিত করেছে। সেই নির্বাচিত সরকারকে আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি বন্দুকের নল দিয়ে হটিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ অগনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করে বছরের পর বছর মসনদে আসীন আছে গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্ব লিডার আমেরিকার ভূমিকা এখানে কি শালীষদারসুলভ হয়েছে? নাকি সাদ্দামের মারণাস্ত্র স্বপ্নে দেখলেও আব্দুল ফাত্তা সিসির ক্ষমতা দখল চোখে পড়েনি
আমরা যদি পাকিস্তানের দিকে তাকাই সেখানে কি হাস্যকর অবস্থা চলছে। যে ইমরান খানকে পাকিস্তানের আপামর জনগণের ৮৫% মানুষ পছন্দ করে সেখানে গণতন্ত্র আইনের শাসন সবই একজন সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে নিষ্পেষিত ও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যে সেনা শাসক আসিফ মুনির বিশ্ব মোড়ল আমেরিকারই অনুগত প্রাণী! তাহলে এখানেও আমেরিকার স্ববিরোধী ভূমিকা কি ফুটে ওঠেনি? পাকিস্তানের ইমরান খানের এত জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে ইমরান খানের পাশে থেকে ইমরান খানকে আয়ত্ত করা কি বিশ্ব মোড়ল হিসেবে আমেরিকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতো না?
একইভাবে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে যতভাবে জরিপ করা হোক না কেন এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন গুলোকে যে কোনোভাবে বিশ্লেষণ করা হোক না কেন বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকে সামান্যতম সংখ্যক মানুষের কোন সমর্থন পাওয়া দুষ্কর হবে। অথচ ছলে বলে কৌশলে, জগদ্দল পাথরের ন্যায় অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। আমেরিকা কি এসব কিছু দেখে না? সমগ্র পৃথিবীতে আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বছাড়া আর কেউ কি বাংলাদেশকে এত বেশি পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা করে? অবশ্যই না। অথচ বিশ্ব মোড়লের আসনে বসে থাকা গণতন্ত্র ও মানবতার জয় গান গাওয়া আমেরিকা বিগত ১৫ বছর যাবৎ জনগণের নিকট আই ওয়াশ স্বরূপ কিছু বুলি আউড়ে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে আমেরিকা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল দিয়ে পিছনে ফিরে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ অফচয় করে ইউক্রেনকে সাহায্য করে কি হলো? রেজাল্টের খাতায় শূন্য। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা করে তখন আমেরিকার চোখে সেটা যুদ্ধ অপরাধ বা গর্হিত কাজ এবং মানবতা বিধ্বংসী কাজ। অন্যদিকে প্রায় পৌনে ১০০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ইয়াহুদী জাতি জেরুজালেমে আশ্রয় নিয়ে ফিলিস্তিনবাসীর মাতৃভূমি থেকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করে, জবরদখল করে, শিশু ও নারীকে নির্বিচারে, নির্মম ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করে,বোম্বিং করে ফিলিস্তিনবাসীকে মাতৃভূমি থেকে বাস্তহারা করতে চায়, অথচ তাদেরকে বিশ্ব শালীরদের একপেশে হয়ে চোখ বুজে তথা অন্ধের মত সার্বিক সহায়তা দেয়া কি মানবতার বিপক্ষে অবস্থান নয়? বিশ্ব প্রভু মহান আল্লাহ ভালভাবে দেখছেন। এতে মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসন হারাবার পথ সুগম করছে আমেরিকা নিজেই? সত্যিকারের গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রেখে আমেরিকা নেতৃত্ব আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে এমনটাই আমরা আশাবাদী।
দোয়া প্রার্থী
মোঃ এনামুল হক জীবন
নির্বাহী সদস্য
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা।
মানবতা ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা কি বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে পেছনে চলে যাচ্ছে?
নদীর একুল ভাঙ্গে ওই কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা রে ভাই এইতো নদীর খেলা। নদী ভাঙ্গনের প্রকৃতির এ নিয়মের কথা সবাই বেশি বা কম জানেন। আর এ নিয়েই আছে প্রভাদ, আছে গান, আছে কবিতা। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মটি শুধু নদী ভাঙ্গনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় এ নিয়মটি জাতি, গোষ্ঠী বা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উত্থান পতনের ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্য করি। পৃথিবী জুড়ে প্রবাদ ছিল, ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হয় না। ব্রিটিশরা যখন দুনিয়া জুড়ে দৌর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে ঘোড়া দৌড়াচ্ছিল তখন এমন কথা সবাই বলতো ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হয় না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এমন কথা আজকাল আর কেউ বলে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা মহা কিতাব আল কুরআনে সূরা ইমরানের ২৬ নং আয়াতে বলেন,বল হে আল্লাহ, বিশ্ব জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্র ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান কর এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত ও অপমানিত করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর উপর শক্তিশালী।
অর্থাৎ প্রকৃতির দোহাই দেই আর যাই করি মূলত: সব ই আল্লাহর সুন্নত। আল্লাহ কাউকে অনেক দিয়ে পরীক্ষা করেন, কারো নিকট থেকে কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে না দিয়েও পরীক্ষা করেন। যেমন তিনি যাকে ইচ্ছা ছেলে দান করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়ে দান করেন, যাকে ইচ্ছা ছেলে ও মেয়ে দুটোই দেন, আবার যাকে ইচ্ছা ছেলে মেয়ে কোনটাই দেন না। সবই তার পরীক্ষা । কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেন, কাউকে বাস্তহারা করেও পরীক্ষা করেন।
বর্তমান পৃথিবীর সর্বজনবিদিত বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হওয়া থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বসালিশদার বনতে থাকে। বনতে বনতে বিশ্ব শালিশ দার, বিশ্বনেতা, বিশ্ব মোড়ল পশ্চিমা প্রভু ইত্যাদি বহু উপাধিতে ভূষিত হতে থাকে। অন্যদের নেতৃত্বের বিদায়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে আল্লাহ তায়ালা এমন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম করে দেয় বিগত বহুদিন, বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়লীপনার ছড়ি ঘুরাতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কথায় অধিকাংশ দেশ উঠ-বস করা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেয়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা সবাই মুখস্ত করে, তাদের সংজ্ঞাতেই সবাই উদাহরণ দেয়, বুলি আওড়ায়। মানবতার বাণী ও মানবতার প্রবক্তা হিসেবে তারাই বিশ্বব্যাপী পরিচিতির আসনে বসে। ইউনাইটেড স্টেট মানি লন্ডারিং এর আইন তৈরি করে বিশ্বব্যাপি সে আইনের প্রচার প্রসার, তালিম, তরবীয়ত চলতে চলতে থাকে। দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংকে ও শাখায় শাখায় মানিলন্ডারিং এর কমিটি ও ডেক্স আলাদা করে । আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের আইন তৈরি করে। আর আমেরিকার মুখে মুখ মিলিয়ে সুরে সুর মিলিয়ে টেরোরিজমের বিশ্বব্যাপি সংজ্ঞায়ন, শ্রেণীকরণ, চিত্রায়ন, চিহ্নিতকরণ চলতে থাকে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বহু ডিভিশন বহু শাখা প্রশাখা টেরোরিজমের উপরে বহু প্রশিক্ষণ, অভিযান, দমন ও নির্মূলিকরণ চলতে থাকে। এভাবে আমেরিকায় যা উচ্চারণ করে, প্রবর্তন করে বা চালু করে বিশ্বব্যাপী অধিকাংশই বুঝে না বুঝে যেভাবেই হোক তল্পি বাহকের ভূমিকায় নেমে পড়ে। বহু দেশ আমেরিকা কে রীতিমতো এমন প্রভুর মতো মনে করে যে , তাদের বাণী বা বক্তব্যকে ঈশ্বরের বাণীর মতো অন্ধভাবে মেনে নিতে থাকে।
কিন্তু বিশ্ব প্রভু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা তার সুন্নত মোতাবেক ক্ষমতার মসনদের পায়াগুলো ক্ষয় করতে শুরু করেছেন। অনেক উঁচু মসনদের খুঁটি গুলো দিন দিন মনে হয় ক্ষয় হয়ে খাটো হতে বসেছে। নিচে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের সামান্য উদাহরণ তুলে ধরছি।ভিয়েতনামের যুদ্ধে নেমে বিলিয়ান বিলিয়ন ডলার অপচয় করেও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরে আসতে হয়। তাতে মর্যাদা অতটা ভুলণ্ঠিত হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তানের অনাহার অর্দাহারে, জীর্ণ-শীর্ণ, অভাবগ্রস্ত দারিদ্র পীড়িত লুঙ্গি পরা পাঞ্জাবি পরা মোল্লাদের সাথে প্রায় ২০ টি বছর লড়াই করে শুধু পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরেনি বরং বিশ্ব নেতৃত্বের আসনকে অনেক ক্ষয় করে ফেলেছে, অনেক নিচে নেমে ফেলেছে।
এর ফাঁক দিয়ে আবার বিশ্বখ্যাত একটা কাগুজে বাঘ ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে মানবতাবিধ্বশী অস্ত্র তৈরি ও মজুদ করার তথ্য আছে বলে সেখানে যে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হলো, তাতে মান আর ইজ্জত কোনটাই বাকি থাকলো কি? যে মারণাস্ত্রের তথ্য আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দেয়া হয়েছে, সেই গোয়েন্দা তথ্য সর্বৈব মিথ্যা প্রমাণিত হলো সারা দুনিয়াব্যাপী। কাগুজে বাঘ সাদ্দামকে মারা সম্ভব হলেও এতে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে গর্ব ও অহমিকা কিন্তু কলঙ্কিত হয়েছে। কেননা লড়াই যদি অন্তত: বাঘে মহিষের না হয়ে সিংহ আর বিড়ালে হয়, তাহলে সেটাকে লড়াই বলা নিতান্তই অপমানজনক।
ইতোমধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেভাবে পশ্চিমা অনুগত শাসকদের কে হটিয়ে সেনাবাহিনী ও আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করেছে এবং পুরো আফ্রিকা জুড়ে একটা একটা দেশ করে পশ্চিমাদের হাতছাড়া হতে চলেছে তাতে বিশ্ব নেতৃত্বে থাকা আমেরিকার জন্য পড়ন্ত বেলার ইঙ্গিত বলে মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন জাতিগত প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অমানবিক ও পৈচাসিক নির্যাতন করে অসংখ্য মুসলিম নারী ও শিশুকে হত্যা করে, পুড়িয়ে ফেলে, মেরে নদীতে ফেলে দেয় তখন বিশ্ব শালীসদার হিসেবে মানবতার জয় গান গাওয়া আমেরিকার ভূমিকা যথার্থ ছিল কি? আর যারা মানবতাকে এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিল তাদের দেশের নেত্রী অংসাঙ সুকিকে বিশ্ব মওড়লরআ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ঘোষণা করল ভালো কথা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সাং সুকি এই মিয়ানমারের এমন ঘৃণিত নিন্দিত সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে জাতিসংঘে মানবতা ও শান্তির বিপক্ষে অবস্থান নিল ! ছি! ছি!
আর পৃথিবীবাসী কি দেখলো? দেখল, আল্লাহর সুন্নত! সেটা কি? সেটা তো সবাই আজ প্রত্যক্ষ করছে মানবতাবিধ্বংশী মিয়ানমারের সেই সেনাবাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অংসাং সুখী কে ক্ষমতাচ্যুত করে জেলখানায় পুরিয়ে শান্তিতে নোবেলের মর্যাদা বুটের তলায় পৃষ্ঠ করছে! গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাসিত সরকারকে ও নোবেল বিজয়ী সুকীকে আমেরিকা কি প্রটেকশন দিল? এই পৈচাশিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃত্ব যখন যথার্থ ভূমিকা নেয়নি তখন আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে একশন নেয়া শুরু করেছেন, তাই নয় কি? আমরা দেখি মিশরে নিরঙ্কুশ ও নির্ভেজাল নির্বাচনের মাধ্যমে ৮৬ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে ডঃ মুর্সিকে মিশরের জনগণ নির্বাচিত করেছে। সেই নির্বাচিত সরকারকে আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি বন্দুকের নল দিয়ে হটিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ অগনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করে বছরের পর বছর মসনদে আসীন আছে গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্ব লিডার আমেরিকার ভূমিকা এখানে কি শালীষদারসুলভ হয়েছে? নাকি সাদ্দামের মারণাস্ত্র স্বপ্নে দেখলেও আব্দুল ফাত্তা সিসির ক্ষমতা দখল চোখে পড়েনি
আমরা যদি পাকিস্তানের দিকে তাকাই সেখানে কি হাস্যকর অবস্থা চলছে। যে ইমরান খানকে পাকিস্তানের আপামর জনগণের ৮৫% মানুষ পছন্দ করে সেখানে গণতন্ত্র আইনের শাসন সবই একজন সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে নিষ্পেষিত ও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যে সেনা শাসক আসিফ মুনির বিশ্ব মোড়ল আমেরিকারই অনুগত প্রাণী! তাহলে এখানেও আমেরিকার স্ববিরোধী ভূমিকা কি ফুটে ওঠেনি? পাকিস্তানের ইমরান খানের এত জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে ইমরান খানের পাশে থেকে ইমরান খানকে আয়ত্ত করা কি বিশ্ব মোড়ল হিসেবে আমেরিকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতো না?
একইভাবে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে যতভাবে জরিপ করা হোক না কেন এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন গুলোকে যে কোনোভাবে বিশ্লেষণ করা হোক না কেন বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকে সামান্যতম সংখ্যক মানুষের কোন সমর্থন পাওয়া দুষ্কর হবে। অথচ ছলে বলে কৌশলে, জগদ্দল পাথরের ন্যায় অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। আমেরিকা কি এসব কিছু দেখে না? সমগ্র পৃথিবীতে আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বছাড়া আর কেউ কি বাংলাদেশকে এত বেশি পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা করে? অবশ্যই না। অথচ বিশ্ব মোড়লের আসনে বসে থাকা গণতন্ত্র ও মানবতার জয় গান গাওয়া আমেরিকা বিগত ১৫ বছর যাবৎ জনগণের নিকট আই ওয়াশ স্বরূপ কিছু বুলি আউড়ে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে আমেরিকা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল দিয়ে পিছনে ফিরে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ অফচয় করে ইউক্রেনকে সাহায্য করে কি হলো? রেজাল্টের খাতায় শূন্য। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা করে তখন আমেরিকার চোখে সেটা যুদ্ধ অপরাধ বা গর্হিত কাজ এবং মানবতা বিধ্বংসী কাজ। অন্যদিকে প্রায় পৌনে ১০০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ইয়াহুদী জাতি জেরুজালেমে আশ্রয় নিয়ে ফিলিস্তিনবাসীর মাতৃভূমি থেকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করে, জবরদখল করে, শিশু ও নারীকে নির্বিচারে, নির্মম ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করে,বোম্বিং করে ফিলিস্তিনবাসীকে মাতৃভূমি থেকে বাস্তহারা করতে চায়, অথচ তাদেরকে বিশ্ব শালীরদের একপেশে হয়ে চোখ বুজে তথা অন্ধের মত সার্বিক সহায়তা দেয়া কি মানবতার বিপক্ষে অবস্থান নয়? বিশ্ব প্রভু মহান আল্লাহ ভালভাবে দেখছেন। এতে মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসন হারাবার পথ সুগম করছে আমেরিকা নিজেই? সত্যিকারের গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রেখে আমেরিকা নেতৃত্ব আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে এমনটাই আমরা আশাবাদী।
দোয়া প্রার্থী
মোঃ এনামুল হক জীবন
নির্বাহী সদস্য
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
এ এম জি ফেরদৌস
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
নাহিদুল ফাহিম
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
ইঞ্জি. মেহেদী হাসান |
প্রধান কার্যালয়
পূর্ব লিংক রোড, ঝিরংঝা, কক্সবাজার
মোবাইল
০১৮১৯-৫০২-৩২২
ই-মেইল beachnews24@gmail.com |
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: October 9, 2024, 1:23 am