আশ্চর্য লাগছে? হেডিংটা দেখে কারো কারো গাত্রদাহ হতে পারে, শরীরে জ্বালা পোড়া হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বিদ্রোহ বা ক্যু, নামমাত্র নির্বাচন, ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করে, ভোট বাক্স ছিনতাই করে তামাশার নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেড়শ এম পির নির্বাচিত হয়ে যাওয়া দুই নম্বর নির্বাচনে ক্ষমতায় আরোহন নয় কিংবা ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের মত হাস্যকর কোন নির্বাচিত সরকার নয়। আসুন আমরা একটি একটি করে বিভিন্ন প্রকারের গঠিত সরকারের কিছু উদাহরণ তুলে ধরলে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট এর ডক্টর মোঃ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার কেমন ধরনের সরকার।
একটা রাষ্ট্রের কোন নিজস্ব স্বার্থকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ হলে সেটাকে বিদ্রোহ বলা যায়। বিদ্রোহ দমনে সরকার ব্যর্থ হলে বিদ্রোহীরা জীবন বাজি রেখে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলে বিদ্রোহী সরকার গঠিত হয়। যেমন বিশেষ জাতি গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক কোন দলের হতে পারে। যেমন মুসলিম জাতি, হিন্দু জাতি পাহাড়িনৃতাত্তক জাতি সরকারের প্রচরলিত আইন কানুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যদি রাষ্ট্র গঠিত হয় সেটা বিদ্রোহী সরকার।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বিদ্রোহের ডাক দিলে এবং সরকার সেটা দমিয়ে দিতে বা থামিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে সেনা বা পুলিশ এর সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিলে, সরকারউক্ত বিদ্রোহ কমিয়ে দিত ব্যর্থ হলে সেনা বা পুলিশ ক্যু বলা যায়। এভাবে বিদ্রোহী সরকার গঠিত হতে পারে।
জুডিশিয়াল ক্যু বা বিদ্রোহ হতে পারে। যেমন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত বা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে আইন জারি করে সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় বিদ্রোহের ফলস্বরূপ পরবর্তী সরকার গঠিত হতে পারে। আমাদের তরতাজা উদাহরণ রয়েছে, যেমন ৫ ই আগস্ট ২০২৪ সালের শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরও প্রধান বিচারপতি ফুল কোর্ট বিচারিক সম্মেলনের ডাক দেয় এবং সকল বিচারককে ঐক্যবদ্ধ করে বিপ্লব উত্তর সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার পাঁয়তারা করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা তাৎক্ষণিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও ও কোট প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়, ফলে এই জুডিশিয়াল বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
আবার আনসারবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে বিদ্রোহের মাধ্যমে আরেকটা বিদ্রোহ সফল করতে গিয়েও শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা শুরুতেই ব্যর্থ হয়।
এগুলোকে আমরা বিভিন্ন বিভাগ বা বাহিনীর কোয়া বিদ্রোহ বলতে পারি।
গণ আন্দোলন : ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ সম্মিলিত আন্দোলন করে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রধান বিচারপতি কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এরশাদ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বাজায়। সেটাকে আমরা গণ-আন্দোলনের বলতে পারি।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় লংকা কান্ড: শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তথা অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে এবং মাহিন্দ রাজা পাকশীর বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন তৈরি হয় এবং ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ ঠেকাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেও গণ আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। গণ আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া রাজা পাকশীর পরবর্তী সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের সরকার বলা যায়।
১৯৭৮ সালের ইরানের রেজাসাহ পাহলবীর বিরুদ্ধে ইরানের ধর্মীয় নেতা ইমাম খমিনী আন্দোলনের ডাক দেয় এবং জনগণ ঐ আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিতে থাকে, রেজা শাহ পাহলবি সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করলেও মানুষ রাজপথ ছেড়ে যায়নি অসংখ্য মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে শহীদ হয় এবং সশস্ত্র সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে পিছু হটতে থাকে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে রেজা শাহ পাটনবীর সরকারের পতন ঘটায় এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের গঠিত ইরানের সে সরকার ইতিহাসের পাতায় বিপ্লবী সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি এভাবে বিভিন্ন সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিদ্রোহ বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো ২০০৮ সাল থেকে শেখ হাসিনা ছলে বলে কৌশলে, গায়ের জোরে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর জগদ্দল পাথরের ন্যায় ক্ষমতার মসনদটা আঁকড়ে রাখে, গণতন্ত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে, সকল শ্রেণী, পেশার মানুষকে জিম্মি করে মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক হরণ করে, জনগণের বন্ধু পুলিশকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করে, অর্থনৈতিক অঙ্গনকে দেউলিয়া করে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকেও নির্লজ্জভাবে এমন কলুষিত ও দলীয়করণ করে যে, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের সুবিচার থেকে মানুষ বঞ্চিত হতে থাকে এবং সকল শ্রেণীর পেশার মানুষকে হতাশার সাগরের নিমজ্জিত করে, দেশ প্রেমকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশ প্রেম তথা ভারত প্রেমে আসক্ত হতে হতে ভারতপূজারী হয়ে বসে, দেশের সকল স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে মত্ত থাকে, অর্থনৈতিক দৈন্য দশা, বেকারত্বের অভিশাপ,শিক্ষা ব্যবস্থায় বেহাল দশা, ব্যবসা-বাণিজ্যে সিন্ডিকেট ও মজুূদদারীদের দৌরাত্ম, রাজনৈতিক অঙ্গনে হতাশা ও সর্বোচ্চ দলীয়করণ, দুর্নীতিতে ছয়লাব এর ফলে সকল পেশার মানুষকে খেপিয়ে তোলে এবং একদলীয় আওয়ামীপন্থী স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় কিছু উচ্ছিষ্টভোগী লোক ছাড়া সবাই শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, সুযোগ খুঁজতে থাকে, মানুষ খেকো জালিম শাসক থেকে কবে মুক্তি মিলবে? সর্বত্রই এক দলীয়করণ করতে করতে মানুষের নাবিশ্বাস হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কার পূর্বক মেধা ভিত্তিক চাকরির জন্য আইনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয় ২০১৮ সালে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুট কৌশল করে কোটা সিস্টেম বাতিল ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদেরকে প্রতারিত করে এবং আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়; কোটা বাতিল ঘোষণা করলে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনের মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর দলীয় লোকদের দিয়ে কোটার পক্ষে পুনরায় মামলা করে এবং জাতিকে মেধাশূন্য করে রাষ্ট্র পরিচালনার চক্রন্ত চালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয এর মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ২০১৮ সাল থেকে ধৈর্য ধারণ করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে চূড়ান্ত কোন ফলাফল না পাওয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে ৩০% অগ্রাধিকার দিয়ে চাকরি দেয়ার আইন জারি থাকে, জেলা ভিত্তিক কোটা, পাহাড়ি নৃতাত্তিক কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এভাবে বিভিন্ন কোটা ভিত্তিক চাকরির সুবিধা বহাল রেখে আইন জারি করে মেধাবীদেরকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলতে থাকে। ফলে ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসে, তাদের এই আন্দোলনের সাথে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা যোগদান করে, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ যোগদান করে, দীর্ঘদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিক্ষুব্ধ, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, নিগৃহীত, নির্যাতিত মানুষগুলো এ আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী, শ্রেণী, পেশা, কুলি,মুটে,মজুর তথা মেহনতি মানুষ নির্বিশেষে সকলে এ ছাত্র আন্দোলনের সাথে যোগ দিয়ে এটাকে গণ বিপ্লবের রূপান্তরিত করে। পুলিশ, বিজেপি, রেব, সেনাবাহিনীকে দিয়ে গুলি করে নির্বিচারে অগণিত মানুষকে হত্যা করেও এ আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এর কারণে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় ও ২০২৪ এর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং তার সাথে সাথে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নাগাদ স্বৈর শাসনের সাথে জড়িত দলীয় নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। ফলে সম্পূর্ণ সফল একটি বিপ্লব সাধিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই এই আন্দোলন একটি সফল ও সার্থক বিপ্লবের পরিণত হয় এবং বিশ্বজোড়া খ্যাতি সম্পন্ন ডক্টর ইউনুসকে বিপ্লব উত্তর সরকারের প্রধান করে সরকার গঠিত হয়. জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের পক্ষ থেকে ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত বিপ্লবী সরকারকে সমর্থন দিতে থাকে। তাই এ সরকার কোন ক্যু বা বিদ্রোহ কিংবা মুষ্টিমেয় জনজনসাধারণের সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নয়, বরং সকল শ্রেণী পেশা ও দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে,অসংখ্য মানুষের চোখ, কান হাত,পাঁ হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ, ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবনকে অকাতরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তথা শহীদ হয়ে সফল ও স্বর্থক বিপ্লবী সরকার গঠন করে। তাই এই সরকার সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও সাদরে বরণ করে নেওয়া, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোচ্চ ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার।
লেখক : সাহিত্যিক সাংবাদিক কলামিস্টও মানবাধিকার কর্মী।
মোহাম্মদ এনামুল হক জীবন সেক্রেটারি, ঢাকা বিভাগ, মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা।
২০২৪ সালের ডক্টর ইউনুস এর সরকার সর্বোচ্চ ম্যান্ডেট প্রাপ্ত সরকার!
আশ্চর্য লাগছে? হেডিংটা দেখে কারো কারো গাত্রদাহ হতে পারে, শরীরে জ্বালা পোড়া হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বিদ্রোহ বা ক্যু, নামমাত্র নির্বাচন, ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করে, ভোট বাক্স ছিনতাই করে তামাশার নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেড়শ এম পির নির্বাচিত হয়ে যাওয়া দুই নম্বর নির্বাচনে ক্ষমতায় আরোহন নয় কিংবা ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের মত হাস্যকর কোন নির্বাচিত সরকার নয়। আসুন আমরা একটি একটি করে বিভিন্ন প্রকারের গঠিত সরকারের কিছু উদাহরণ তুলে ধরলে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট এর ডক্টর মোঃ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার কেমন ধরনের সরকার।
একটা রাষ্ট্রের কোন নিজস্ব স্বার্থকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ হলে সেটাকে বিদ্রোহ বলা যায়। বিদ্রোহ দমনে সরকার ব্যর্থ হলে বিদ্রোহীরা জীবন বাজি রেখে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলে বিদ্রোহী সরকার গঠিত হয়। যেমন বিশেষ জাতি গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক কোন দলের হতে পারে। যেমন মুসলিম জাতি, হিন্দু জাতি পাহাড়িনৃতাত্তক জাতি সরকারের প্রচরলিত আইন কানুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যদি রাষ্ট্র গঠিত হয় সেটা বিদ্রোহী সরকার।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বিদ্রোহের ডাক দিলে এবং সরকার সেটা দমিয়ে দিতে বা থামিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে সেনা বা পুলিশ এর সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিলে, সরকারউক্ত বিদ্রোহ কমিয়ে দিত ব্যর্থ হলে সেনা বা পুলিশ ক্যু বলা যায়। এভাবে বিদ্রোহী সরকার গঠিত হতে পারে।
জুডিশিয়াল ক্যু বা বিদ্রোহ হতে পারে। যেমন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত বা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে আইন জারি করে সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় বিদ্রোহের ফলস্বরূপ পরবর্তী সরকার গঠিত হতে পারে। আমাদের তরতাজা উদাহরণ রয়েছে, যেমন ৫ ই আগস্ট ২০২৪ সালের শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরও প্রধান বিচারপতি ফুল কোর্ট বিচারিক সম্মেলনের ডাক দেয় এবং সকল বিচারককে ঐক্যবদ্ধ করে বিপ্লব উত্তর সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার পাঁয়তারা করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা তাৎক্ষণিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও ও কোট প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়, ফলে এই জুডিশিয়াল বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
আবার আনসারবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে বিদ্রোহের মাধ্যমে আরেকটা বিদ্রোহ সফল করতে গিয়েও শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা শুরুতেই ব্যর্থ হয়।
এগুলোকে আমরা বিভিন্ন বিভাগ বা বাহিনীর কোয়া বিদ্রোহ বলতে পারি।
গণ আন্দোলন : ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ সম্মিলিত আন্দোলন করে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রধান বিচারপতি কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এরশাদ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বাজায়। সেটাকে আমরা গণ-আন্দোলনের বলতে পারি।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় লংকা কান্ড: শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তথা অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে এবং মাহিন্দ রাজা পাকশীর বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন তৈরি হয় এবং ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ ঠেকাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেও গণ আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। গণ আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া রাজা পাকশীর পরবর্তী সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের সরকার বলা যায়।
১৯৭৮ সালের ইরানের রেজাসাহ পাহলবীর বিরুদ্ধে ইরানের ধর্মীয় নেতা ইমাম খমিনী আন্দোলনের ডাক দেয় এবং জনগণ ঐ আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিতে থাকে, রেজা শাহ পাহলবি সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করলেও মানুষ রাজপথ ছেড়ে যায়নি অসংখ্য মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে শহীদ হয় এবং সশস্ত্র সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে পিছু হটতে থাকে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে রেজা শাহ পাটনবীর সরকারের পতন ঘটায় এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের গঠিত ইরানের সে সরকার ইতিহাসের পাতায় বিপ্লবী সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি এভাবে বিভিন্ন সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিদ্রোহ বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো ২০০৮ সাল থেকে শেখ হাসিনা ছলে বলে কৌশলে, গায়ের জোরে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর জগদ্দল পাথরের ন্যায় ক্ষমতার মসনদটা আঁকড়ে রাখে, গণতন্ত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে, সকল শ্রেণী, পেশার মানুষকে জিম্মি করে মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক হরণ করে, জনগণের বন্ধু পুলিশকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করে, অর্থনৈতিক অঙ্গনকে দেউলিয়া করে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকেও নির্লজ্জভাবে এমন কলুষিত ও দলীয়করণ করে যে, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের সুবিচার থেকে মানুষ বঞ্চিত হতে থাকে এবং সকল শ্রেণীর পেশার মানুষকে হতাশার সাগরের নিমজ্জিত করে, দেশ প্রেমকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশ প্রেম তথা ভারত প্রেমে আসক্ত হতে হতে ভারতপূজারী হয়ে বসে, দেশের সকল স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে মত্ত থাকে, অর্থনৈতিক দৈন্য দশা, বেকারত্বের অভিশাপ,শিক্ষা ব্যবস্থায় বেহাল দশা, ব্যবসা-বাণিজ্যে সিন্ডিকেট ও মজুূদদারীদের দৌরাত্ম, রাজনৈতিক অঙ্গনে হতাশা ও সর্বোচ্চ দলীয়করণ, দুর্নীতিতে ছয়লাব এর ফলে সকল পেশার মানুষকে খেপিয়ে তোলে এবং একদলীয় আওয়ামীপন্থী স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় কিছু উচ্ছিষ্টভোগী লোক ছাড়া সবাই শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, সুযোগ খুঁজতে থাকে, মানুষ খেকো জালিম শাসক থেকে কবে মুক্তি মিলবে? সর্বত্রই এক দলীয়করণ করতে করতে মানুষের নাবিশ্বাস হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কার পূর্বক মেধা ভিত্তিক চাকরির জন্য আইনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয় ২০১৮ সালে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুট কৌশল করে কোটা সিস্টেম বাতিল ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদেরকে প্রতারিত করে এবং আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়; কোটা বাতিল ঘোষণা করলে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনের মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর দলীয় লোকদের দিয়ে কোটার পক্ষে পুনরায় মামলা করে এবং জাতিকে মেধাশূন্য করে রাষ্ট্র পরিচালনার চক্রন্ত চালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয এর মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ২০১৮ সাল থেকে ধৈর্য ধারণ করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে চূড়ান্ত কোন ফলাফল না পাওয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে ৩০% অগ্রাধিকার দিয়ে চাকরি দেয়ার আইন জারি থাকে, জেলা ভিত্তিক কোটা, পাহাড়ি নৃতাত্তিক কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এভাবে বিভিন্ন কোটা ভিত্তিক চাকরির সুবিধা বহাল রেখে আইন জারি করে মেধাবীদেরকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলতে থাকে। ফলে ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসে, তাদের এই আন্দোলনের সাথে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা যোগদান করে, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ যোগদান করে, দীর্ঘদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিক্ষুব্ধ, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, নিগৃহীত, নির্যাতিত মানুষগুলো এ আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী, শ্রেণী, পেশা, কুলি,মুটে,মজুর তথা মেহনতি মানুষ নির্বিশেষে সকলে এ ছাত্র আন্দোলনের সাথে যোগ দিয়ে এটাকে গণ বিপ্লবের রূপান্তরিত করে। পুলিশ, বিজেপি, রেব, সেনাবাহিনীকে দিয়ে গুলি করে নির্বিচারে অগণিত মানুষকে হত্যা করেও এ আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এর কারণে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় ও ২০২৪ এর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং তার সাথে সাথে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নাগাদ স্বৈর শাসনের সাথে জড়িত দলীয় নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। ফলে সম্পূর্ণ সফল একটি বিপ্লব সাধিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই এই আন্দোলন একটি সফল ও সার্থক বিপ্লবের পরিণত হয় এবং বিশ্বজোড়া খ্যাতি সম্পন্ন ডক্টর ইউনুসকে বিপ্লব উত্তর সরকারের প্রধান করে সরকার গঠিত হয়. জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের পক্ষ থেকে ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত বিপ্লবী সরকারকে সমর্থন দিতে থাকে। তাই এ সরকার কোন ক্যু বা বিদ্রোহ কিংবা মুষ্টিমেয় জনজনসাধারণের সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নয়, বরং সকল শ্রেণী পেশা ও দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে,অসংখ্য মানুষের চোখ, কান হাত,পাঁ হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ, ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবনকে অকাতরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তথা শহীদ হয়ে সফল ও স্বর্থক বিপ্লবী সরকার গঠন করে। তাই এই সরকার সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও সাদরে বরণ করে নেওয়া, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোচ্চ ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার।
লেখক : সাহিত্যিক সাংবাদিক কলামিস্টও মানবাধিকার কর্মী।
মোহাম্মদ এনামুল হক জীবন সেক্রেটারি, ঢাকা বিভাগ, মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
এ এম জি ফেরদৌস
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
নাহিদুল ফাহিম
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
ইঞ্জি. মেহেদী হাসান |
প্রধান কার্যালয়
পূর্ব লিংক রোড, ঝিরংঝা, কক্সবাজার
মোবাইল
০১৮১৯-৫০২-৩২২
ই-মেইল beachnews24@gmail.com |
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: October 9, 2024, 12:32 am